Bansberia: Hangseshwari Temple and Ananta Basudeba Temple
বাঁশবেড়িয়ার রাজপরিবারঃহংসেশ্বরী মন্দির
The Bansberia Raj: Hangseshwari Temple
মধ্যযুগের এক
গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল আদি সপ্তগ্রাম। সেই সময় কিছুকাল সপ্তগ্রাম রাজধানীও ছিল।পূর্ব
ভারতের প্রয়াগ নামে পরিচিত ত্রিবেণী গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থল।তখন সরস্বতী
নদী বাংলার একটা গুরুত্বপূর্ণ নদী ছিল। ধীরে ধীরে সরস্বতী নদী তার নাব্যতা হারায় এবং
সপ্তগ্রাম সহ এই অঞ্চলও তার জৌলুস হারায়। হুগলী জেলা বহু স্থাপত্য কীর্তির জন্য বিখ্যাত।
তার মধ্যে বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির ও অনন্ত বাসুদেব মন্দির অন্যতম।কোন এক ছুটির
দিনে একবেলা ঘুরে আসার জন্য মনোরম এক জায়গা।
হংসেশ্বরী মন্দির ও অনন্ত বাসুদেব মন্দির |
বাঁশবেড়িয়ার রাজপরিবারের ইতিহাসঃ-
বাঁশবেড়িয়ার রাজপরিবারের ইতিহাস সম্বন্ধে প্রামাণ্য বই খুব বেশী নেই। যে দুটো পাওয়া যায় তা হল A.G Bower ‘The Family History of Bansberia Raj’ (1896) এবং Shumboo Chunder Dey এর ‘The Bansberia Raj’ (1908) । এছাড়া আরো একটি বই পাওয়া যায়। হংসেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত তপন চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের লেখা ‘জগজ্জননী হংসেশ্বরী’।
বংশলতিকা |
Shumboo Chunder Dey এর মতে বাঁশবেড়িয়ার এই রাজপরিবারের পূর্বপুরুষের মধ্যে প্রথম যার নাম পাওয়া যায় তিনি হলেন দেবাদিত্য দত্ত। তিনি কনৌজ ছেড়ে আদিসুরের সময় বাংলা তে আসেন। শোনা যায় আদিসুরের নেক নজরে পরে ও নিজের বুদ্ধির বলে দেবাদিত্য মহাশয় বেশকিছু বিষয় সম্পত্তি করেন।এছাড়া তার সম্বন্ধে আর বিশেষ কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তার উত্তরপুরুষদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন যাদব দত্ত। এই যাদব দত্ত ছিলেন বল্লাল সেনের সমসাময়িক। তিনি জমিদার না হলেও সমাজে তার বেশ কিছু প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল। যাদব দত্তর অষ্টম পুরুষ হলেন দ্বারকানাথ দত্ত। ইনি বর্ধমানের পাটুলি তে বসত ভিটে স্থাপন করেন।
বাংলাতে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা
চলছিল সেটাকে বন্ধ করার জন্য আকবর(১৫৪২-১৬০৫) জমিদারী ব্যবস্থা চালু করেন।মোঘল দরবার
থেকে ১৫৭৩ সালে দ্বারকানাথের নাতি সহস্রাক্ষকে ‘ফরমান’ জারী করে ‘জমিদার’ হিসেবে ঘোষণা
করা হয়। মোটামুটি এইসময়ের পর থেকেই বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এই বংশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে
ওঠে।পাটুলির এই দত্ত বংশ প্রথম থেকেই মোঘল সম্রাটদের বেশ আস্থাভাজন ছিলেন। ফলস্বরূপ
সহস্রাক্ষের পুত্র উদয় সম্রাট আকবরের কাছ থেকে
‘রায়’ উপাধি ও উদয়ের পুত্র জয়নন্দ জাহাঙ্গীরের কাছে ‘মজুমদার’ উপাধি লাভ করেন। S.C
Dey লিখছেন সেই সময় বাংলাতে মাত্র ৪ জন ‘মজুমদার’ ছিলেন।যার মধ্যে পাটুলির দত্তরায় ছাড়া নদীয়ার কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের পূর্বপুরুষ ভবানন্দের নাম উল্লেখযোগ্য। ১৬৫৬ সাল মানে পলাশীর যুদ্ধের
প্রায় ১০০ বছর আগে মোঘল সম্রাট শাহজাহান পাটুলির জমিদারদের মোট ২১ টা পরগনার জমিদারীর
জায়গির দান করেন। এই ২১ টি পরগনার মধ্যে ছিল হুগলী জেলার আরশা, বোরো, জেহানাবাদ, খোসালপুর,
বক্সবন্দর, মুজাফফরপুর, হাথিকান্দ, সেলিমপুর,পাওনান ২৪ পরগনার মামদানিপুর, সাহাপুর,
রায়পুর কোতোয়ালি, সাহানগর, হালিশহর, পাইকান, আমিরাবাদ এবং নদীয়া জেলার হালদহ ও পাঞ্জনাউর।
এছাড়া আরও ৩ টে পরগনা ছিল। যেগুলো এখন আর চিহ্নিত করা যায় না। দে মশাই আর বইয়ে এমন
টাই জানিয়েছেন। তৎকালীন বংশধর রাঘব দত্ত রায় চৌধুরীর জমিদারির অধিকাংশটা সপ্তগ্রাম
এলাকার আশেপাশে হওয়ার জন্যে বাঁশবেড়িয়া অঞ্চলে নিয়মিত ভাবে বসবাস শুরু করেন।
জমিদার বাড়ি |
রামেশ্বর রায়কে সম্রাট ঔরঙ্গজেবের দেওয়া সনদ |
আরো বহু উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে ইংরেজি
১৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ( ১৬০১ শকাব্দ) টেরাকোটার অপূর্ব কাজখচিত “অনন্ত বাসুদেব” মন্দিরের
স্থাপনা করেন।“রাজা মশায়” রামেশ্বর দত্ত রায় প্রায় ৪৫ খানা টোল ও চতুষ্পাঠী স্থাপন করেন।রামসরন তর্কবাগীশ
মহাশয়কে নিজের সভা পণ্ডিত হিসেবেও নিযুক্ত করেন।
অনন্ত বাসুদেব মন্দিরঃ-
অনন্ত বাসুদেব মন্দির |
অনন্ত বাসুদেব |
মন্দিরের বেদীতে একটি ব্যাসল্ট শিলার
উপরে প্রাচীন বাংলায় মন্দিরের স্থাপন কাল লেখা আছে।
মহীব্যোমাঙ্গ শীতাংসু
গণিতে
শক
বৎসরে
শ্রীরামেশ্বর দত্তেন
নির্মমে
বিষ্ণুমন্দিরং
।।
অর্থাৎ, মহী= পৃথিবী= ১, ব্যোম=০, অঙ্গ=৬, শীতাংসু=চাঁদ- ১। তবে দাঁড়াল ১০৬১। অঙ্কস্য বামাগতি সুত্রে ১৬০১ শকাব্দ। যার ইংরেজি সাল ১৬৭৯।
ব্যাসল্ট ফলক |
রামেশ্বরের ছেলে রঘুদেব ও ছিলেন পিতার
যোগ্য সন্তান। রঘুদেবকে সুবে বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁন ‘শূদ্রমণি’ উপাধি দেন।
রাজা
নৃসিংহদেব রায়ঃ-(১৭৪১-১৮০২)
রাজা নৃসিংহদেব রায় |
বংশবাটি রাজপরিবারের
সবথেকে খ্যাতনামা ও পণ্ডিত ব্যক্তিগুলোর মধ্যে একজন হলেন নৃসিংহদেব রায়। নৃসিংহদেব রায় একজন বহুভাষাবিদ ছিলেন। সংস্কৃত, ফার্সি, আরবী,
ইংরেজি প্রভৃতি ভাষা তে তার দখল ছিল। এছাড়া শাস্ত্র, সঙ্গীত, শিল্প, সাহিত্যেও তার
অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। “উদ্দিশতন্ত্র” নামে এক শাস্ত্র তিনি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন।
কাশীতে থাকা কালীন খিদিরপুরের রাজা জয়নারায়ন ঘোষালকে তিনি “কাশীকাণ্ড” অনুবাদ করতে
সাহায্য করেন।
রাজবাড়ীর গেট |
প্রধান ফটক |
পঞ্চ মুন্ডির আসন |
রানী শঙ্করীঃ-
হংসেশ্বরী মন্দিরঃ-
হংসেশ্বরী মন্দির |
What did he
do? He built a temple. Still
It stands, and 1 have
seen it; but too ill
Would words of
mine describe it. lnside, out,
Silent on
earth, in a pinnacled air a shout,
lt doth reveal what
to the initiate
Figures pure
thought. So unto them a gate
ls opened to
deliverance. 1 outside,
Alien but not
unmoved, untouched, abide
-------Bansberia
Temple
John Alexander Chapman
হংসেশ্বরী মন্দির দেখলে রাজা নৃসিংহদেবর তান্ত্রিক যোগ সম্বন্ধে যে অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল তার আচ পাওয়া যায়। বাংলা কেন সারা ভারতে এমন মন্দিরের দর্শন পাওয়া দুর্লভ। তিনি কুলকুণ্ডলিনী তত্ত্বকে মন্দিরের স্থাপত্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলে ছিলেন। কি অপরিসীম দক্ষতা, অধ্যাবসায় ও প্রতিভা থাকলে এটা সম্ভব হয় সেটা মন্দির দর্শন করলে টের পাওয়া যায়।
এই
মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল মন্দিরেই একটি ব্যাসাল্ট ফলকে লেখা আছে।
শাকাব্দে রস বহ্ণি মৈত্র গণিতে শ্রীমন্দিরং মন্দিরং।
মোক্ষদ্বার চতুর্দ্দশেশ্বর সমং হংসেশ্বরী রাজিতং।।
ভূপালেন নৃসিংহদেব কৃতিনারব্ধং তদাজ্ঞানুগা।
তৎপত্নী গুরুপাদপদ্মনিরতা শ্রীশঙ্করী নির্ম্মমে।।
ব্যাসাল্ট ফলক |
সাদা শিব |
ষটচক্রভেদের তত্ত্বকে অনুসরণ করে এই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরের গর্ভগৃহে অর্থাৎ ‘মূলাধারে’ সহস্রদল পদ্মের উপরে কুণ্ডলিনী শক্তিরূপ দেবী হংসেশ্বরী বিরাজমান।
ষটচক্র |
মা হংসেশ্বরী |
নারায়ণ স্যানাল ও হংসেশ্বরীঃ
নারায়ণ সান্যালের
লেখা হংসেশ্বরী বইটি বহুল পঠিত। আমার ব্যক্তিগত মতামত বইটি রচনাকালে নারায়ণ সান্যাল
একটু কল্পনার দুনিয়াতে রাশ টানলেই পারতেন। তিনি মূলত ঐতিহাসিক তথ্য গুলোর জায়গাতে
S.C dey বইটির প্রায় বঙ্গানুবাদ করেছেন। এবং কিছু জায়গায় নিজের কল্পনা মিশিয়েছেন। তাই
কতগুলো জায়গাতে তথ্যের ত্রুটি চোখে পরে। দুটো উদাহরণ দিই-
১। গোবিন্দদেব ও সত্যসুন্দরীর পুত্র ছিলেন রাজা নৃসিংহ দেবরায়।তিনি নৃসিংহদেব'র মা'র নাম হংসেশ্বরী করে দেন।
২। রানী শঙ্করী ও শঙ্করদেব কে নিয়ে যে কাল্পনিক গপ্প ফেঁদে উনি যে গোটা বই জুড়ে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন প্রসঙ্গে সেটা এনেছেন তেমন টা বাস্তবে ঘটে নি। আর আমদের বেশীর ভাগের যখন স্কুলের গণ্ডির বাইরে ইতিহাস পড়া হয় না তখন এমন তথ্য বিকৃতি না ঘটানোই শ্রেয়। তাতে চরিত্রগুলির অবমুল্যায়ন ঘটে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
১। রথীন্দ্র সরস্বতী
২।শুভদিপ মুখারজি
৩। অরিজিত সান্যাল
তথ্যসূত্রঃ-
১।‘The
Bansberia Raj’ (1908)- Shumboo Chunder Dey
২। 'Monumentalizing Tantra:The Multiple
Identities of the Hamsesvari Devï Temple and the Bansberia Zamindari'(2008)- Mohini
Datta-Ray
৫। Rangan Dutta
৬। ইন্টারনেট
Note: Do share and comment. And to support click on the amazon affiliate link provided in the blog.
ছোটখাট দুএকটা ভাষার ভুল ছাড়া, খুব ভালো লেখা হয়েছে। রাজা নৃসিংহদেবের পূর্বপুরুষদের বর্ণণা সামান্য দীর্ঘ। লেখাটিতে সৎ পরিশ্রম এর প্রকাশ সুস্পষ্ট
ReplyDeleteভাসাটা খাপছাড়া লাগছিল?
Deleteসুন্দর হয়েছে । পরে সত্যি খুব ভালো লাগলো ।
ReplyDeletethnak you
DeleteWaooo sera to
ReplyDeleteSeraaa
ReplyDeletethank you
DeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteলেখাটি পরে খুবই ভালো লাগলো। ছবিগুলি খুবই প্রাঞ্জল। তথ্য সঞ্চয়নে পারদর্শিতা চোখে পড়ার মতো। এরকম কম জানা বিষয়ে আরো নিবন্ধ পড়ার আশা থাকলো। ধন্যবাদ।
ReplyDeleteধন্যবাদ অনুপম দা।
Deletenice information
ReplyDeleteThanks a lot
DeleteInformative content on specific place, hangseshwari temple.
ReplyDelete