Header Ads

Header ADS

Bansberia: Hangseshwari Temple and Ananta Basudeba Temple

বাঁশবেড়িয়ার রাজপরিবারঃহংসেশ্বরী মন্দির 

The Bansberia Raj: Hangseshwari Temple


মধ্যযুগের এক গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল আদি সপ্তগ্রাম। সেই সময় কিছুকাল সপ্তগ্রাম রাজধানীও ছিল।পূর্ব ভারতের প্রয়াগ নামে পরিচিত ত্রিবেণী গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থল।তখন সরস্বতী নদী বাংলার একটা গুরুত্বপূর্ণ নদী ছিল। ধীরে ধীরে সরস্বতী নদী তার নাব্যতা হারায় এবং সপ্তগ্রাম সহ এই অঞ্চলও তার জৌলুস হারায়। হুগলী জেলা বহু স্থাপত্য কীর্তির জন্য বিখ্যাত। তার মধ্যে বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির ও অনন্ত বাসুদেব মন্দির অন্যতম।কোন এক ছুটির দিনে একবেলা ঘুরে আসার জন্য মনোরম এক জায়গা।  


হংসেশ্বরী মন্দির ও অনন্ত বাসুদেব মন্দির

বাঁশবেড়িয়ার রাজপরিবারের ইতিহাসঃ-

বাঁশবেড়িয়ার রাজপরিবারের ইতিহাস সম্বন্ধে প্রামাণ্য বই খুব বেশী নেই। যে দুটো পাওয়া যায় তা হল A.G Bower ‘The Family History of Bansberia Raj’ (1896) এবং Shumboo Chunder Dey এরThe Bansberia Raj’ (1908) এছাড়া আরো একটি বই পাওয়া যায়। হংসেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত তপন চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের লেখা ‘জগজ্জননী হংসেশ্বরী’। 

বংশলতিকা

Shumboo Chunder Dey এর মতে বাঁশবেড়িয়ার এই রাজপরিবারের পূর্বপুরুষের মধ্যে প্রথম যার নাম পাওয়া যায় তিনি হলেন দেবাদিত্য দত্ত। তিনি কনৌজ ছেড়ে আদিসুরের সময় বাংলা তে আসেন। শোনা যায় আদিসুরের নেক নজরে পরে ও নিজের বুদ্ধির বলে দেবাদিত্য মহাশয় বেশকিছু বিষয় সম্পত্তি করেন।এছাড়া তার সম্বন্ধে আর বিশেষ কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তার উত্তরপুরুষদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন যাদব দত্ত। এই যাদব দত্ত ছিলেন বল্লাল সেনের সমসাময়িক। তিনি জমিদার না হলেও সমাজে তার বেশ কিছু প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল। যাদব দত্তর অষ্টম পুরুষ হলেন দ্বারকানাথ দত্ত। ইনি বর্ধমানের পাটুলি তে বসত ভিটে স্থাপন করেন। 

বাংলাতে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল সেটাকে বন্ধ করার জন্য আকবর(১৫৪২-১৬০৫) জমিদারী ব্যবস্থা চালু করেন।মোঘল দরবার থেকে ১৫৭৩ সালে দ্বারকানাথের নাতি সহস্রাক্ষকে ‘ফরমান’ জারী করে ‘জমিদার’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মোটামুটি এইসময়ের পর থেকেই বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এই বংশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।পাটুলির এই দত্ত বংশ প্রথম থেকেই মোঘল সম্রাটদের বেশ আস্থাভাজন ছিলেন। ফলস্বরূপ  সহস্রাক্ষের পুত্র উদয় সম্রাট আকবরের কাছ থেকে ‘রায়’ উপাধি ও উদয়ের পুত্র জয়নন্দ জাহাঙ্গীরের কাছে ‘মজুমদার’ উপাধি লাভ করেন। S.C Dey লিখছেন সেই সময় বাংলাতে মাত্র ৪ জন ‘মজুমদার’ ছিলেন।যার মধ্যে পাটুলির দত্তরায় ছাড়া নদীয়ার কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের পূর্বপুরুষ ভবানন্দের নাম উল্লেখযোগ্য। ১৬৫৬ সাল মানে পলাশীর যুদ্ধের প্রায় ১০০ বছর আগে মোঘল সম্রাট শাহজাহান পাটুলির জমিদারদের মোট ২১ টা পরগনার জমিদারীর জায়গির দান করেন। এই ২১ টি পরগনার মধ্যে ছিল হুগলী জেলার আরশা, বোরো, জেহানাবাদ, খোসালপুর, বক্সবন্দর, মুজাফফরপুর, হাথিকান্দ, সেলিমপুর,পাওনান ২৪ পরগনার মামদানিপুর, সাহাপুর, রায়পুর কোতোয়ালি, সাহানগর, হালিশহর, পাইকান, আমিরাবাদ এবং নদীয়া জেলার হালদহ ও পাঞ্জনাউর। এছাড়া আরও ৩ টে পরগনা ছিল। যেগুলো এখন আর চিহ্নিত করা যায় না। দে মশাই আর বইয়ে এমন টাই জানিয়েছেন। তৎকালীন বংশধর রাঘব দত্ত রায় চৌধুরীর জমিদারির অধিকাংশটা সপ্তগ্রাম এলাকার আশেপাশে হওয়ার জন্যে বাঁশবেড়িয়া অঞ্চলে নিয়মিত ভাবে বসবাস শুরু করেন।  

জমিদার বাড়ি 

রাজা রামেশ্বর রায় মশায় ও অনন্ত বাসুদেব মন্দিরঃ-

রাঘব দত্ত-এর মৃত্যুর পর তার পুত্র রামেশ্বর দত্তরায় পূর্বপুরুষদের ভিটে পাটুলি ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে বাঁশবেড়িয়াতে বসবাস শুরু করেন। রামেশ্বর বিশাল বাঁশ বাগান পরিস্কার করিয়ে এক মাইল জুড়ে বিশাল পরিখা কাটান ও একটি দুর্গ প্রতিষ্ঠা করেন।এই দুর্গ লোকমুখে 'গড়বাটি' নামে পরিচিত হয়। শোনা যায়,তিনি এই দুর্গের চারিপাশে বাঁশের বেড়া তৈরি করান। অনেকের মত সেখান থেকেই বাঁশবেড়িয়া নামের উৎপত্তি। তবে S.C Dey তার বইয়ে লিখছেন মারাঠা আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য নাকি এই বাঁশের বেড়া তৈরি করেন রামেশ্বর বাবু। এছাড়া আরো লিখেছেন,   "an asylum for the neighbouring villagers to resort to ... When the Marhatta horsemen, spreading ruin and desolation in their way, came near Tri beni, the people would flee thither for safety and protection." । কিন্তু দে বাবু বোধকরি সময়কাল টা একটু গুলিয়ে ফেলেছিলেন। কারণ বাংলায় প্রথম মারাঠা আক্রমণ ঘটে ১৭৪১ সালে।আর দে মশায়ই লিখছেন যে রামেশ্বর দত্ত অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে মারা যান। এখান থেকে বলতে পারি মারাঠা আক্রমণের তত্ত্বটা একটু গোলমেলে।



জমিদার বাড়ি


সেই সময় বহু জমিদারই খাজনা দিতে গাফিলতি করত।রামেশ্বর দত্তরায় এই ব্যাপারটা দিল্লীর সম্রাটের নজরে আনেন ও  ১৬৭৩ সালে মোঘল বাদশাহ শাহ্‌ আলম খুশি হয়ে রামেশ্বর দত্তকে  পঞ্জ-পর্চা খেলাৎ ও বংশানুক্রমিক “রাজা মশায়” উপাধিতে ভূষিত করেন এবং নিশুল্কে  আরো ৪০১ বিঘা জমি ও কলিকাতা সহ ১২ টি পরগণা প্রদান করেন। অবশ্য তার জীবৎকালেই ১৬৯০ সালে কলকাতা, গোবিন্দপুর ও সুতানুটি ইংরেজদের দিয়ে দেওয়া হয়।
রামেশ্বর রায়কে সম্রাট ঔরঙ্গজেবের দেওয়া সনদ

আরো বহু উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে ইংরেজি ১৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ( ১৬০১ শকাব্দ) টেরাকোটার অপূর্ব কাজখচিত “অনন্ত বাসুদেব” মন্দিরের স্থাপনা করেন।“রাজা মশায়” রামেশ্বর দত্ত রায় প্রায়  ৪৫ খানা টোল ও চতুষ্পাঠী স্থাপন করেন।রামসরন তর্কবাগীশ মহাশয়কে নিজের সভা পণ্ডিত হিসেবেও নিযুক্ত করেন।



অনন্ত বাসুদেব মন্দিরঃ- 


অনন্ত বাসুদেব মন্দির



হংসেশ্বরী মন্দিরের পূর্ব দিকে অবস্থিত এই মন্দিরটির মূল দেবতা ভগবান বিষ্ণু।এই মন্দিরটি মধ্যযুগের টেরাকোটা স্থাপ্যতের একটু উজ্জ্বল নিদর্শন।

অনন্ত বাসুদেব


মন্দিরের বেদীতে একটি ব্যাসল্ট শিলার উপরে প্রাচীন বাংলায় মন্দিরের স্থাপন কাল লেখা আছে।

    মহীব্যোমাঙ্গ শীতাংসু গণিতে শক বৎসরে

    শ্রীরামেশ্বর দত্তেন নির্মমে বিষ্ণুমন্দিরং ।।

অর্থাৎ, মহী= পৃথিবী= ১, ব্যোম=০, অঙ্গ=৬,  শীতাংসু=চাঁদ- ১। তবে দাঁড়াল ১০৬১। অঙ্কস্য বামাগতি সুত্রে ১৬০১ শকাব্দ। যার ইংরেজি সাল ১৬৭৯।      

ব্যাসল্ট ফলক

 এটি একটি এক রত্ন মন্দির। এই মন্দিরটির বেদী বর্গাকার, ছাদ বাংলা চালা ধাঁচের ও উপরে একটি বিশাল অষ্ট ভুজাকার চূড়ো আছে। 

মন্দিরের দেওয়ালে রামায়ণ ও পুরাণ থেকে অপূর্ব টেরাকোটার কাজ রয়েছে। কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনাকে টেরাকোটা প্যানেলে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যেমন- দক্ষযজ্ঞ, মহিষাসুরমর্দিনী, উমা-শঙ্করের বিবাহ, রাম রাবণের যুদ্ধ। এর মধ্যে কয়েকটা উল্লেখযোগ্য প্যানেল হল ‘রাসমণ্ডল’ ও ‘নৌকাবিলাস’। 

  



ষড়ভুজ কৃষ্ণ


রাম রাবণের যুদ্ধ


পুত্রেষ্টি যজ্ঞ

নৃত্যশিল্পী ও বাদিকার দল

বাঁদর ও টিয়া 

রাস মণ্ডল
photo courtesy Anomitra Neogy


ভগবান পরশুরাম 

রামেশ্বরের ছেলে রঘুদেব ও ছিলেন পিতার যোগ্য সন্তান। রঘুদেবকে সুবে বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁন ‘শূদ্রমণি’ উপাধি দেন। 

রাজা নৃসিংহদেব রায়ঃ-(১৭৪১-১৮০২)  

রাজা নৃসিংহদেব রায়

বংশবাটি রাজপরিবারের সবথেকে খ্যাতনামা ও পণ্ডিত ব্যক্তিগুলোর মধ্যে একজন হলেন নৃসিংহদেব রায়। নৃসিংহদেব রায় একজন বহুভাষাবিদ ছিলেন। সংস্কৃত, ফার্সি, আরবী, ইংরেজি প্রভৃতি ভাষা তে তার দখল ছিল। এছাড়া শাস্ত্র, সঙ্গীত, শিল্প, সাহিত্যেও তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। “উদ্দিশতন্ত্র” নামে এক শাস্ত্র তিনি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন। কাশীতে থাকা কালীন খিদিরপুরের রাজা জয়নারায়ন ঘোষালকে তিনি “কাশীকাণ্ড” অনুবাদ করতে সাহায্য করেন। 

রাজবাড়ীর গেট

রঘুদেব রায়ের মৃত্যুর পর নদীয়া রাজ ও বর্ধমান রাজ জমিদারীর কূট চালে বংশবাটির  রাজপরিবারের বেশ কিছু পরগণা দখল করে বসেন। এরফলে বাঁশবেড়িয়ার রাজপরিবারের অবস্থা বেশ পরে যায়।
 

প্রধান ফটক 

এই অপহৃত জমিদারী ফেরত পাওয়ার জন্য নৃসিংহদেব বেশ চেষ্টাচরিত্র করতে শুরু করেন।ইতিমধ্যে বাংলা সহ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিরাট পালাবদল ঘটে গেছে। ক্ষমতায় এসেছে ইংরাজ। রেগুলেশন অ্যাক্ট এর মাধ্যমে বাংলার গভর্নর এখন ওয়ারেন হেস্টিংস। হেস্টিংস তখন ভারতের ম্যাপ তৈরি করার জন্য একজন ইংরেজি জানা জমিদার খুঁজছিলেন। সেই কাজে যোগ্য লোক ছিলেন রাজা নৃসিংহদেব। তিনি তার গুণ ও মেধার কারণে হেস্টিংস-এর প্রিয় পাত্র হয়ে উঠলেন এবং প্রথমে হেস্টিংস ও পরে কর্ণওয়ালিশের সহায়তায় ২৪ পরগণার জমিদারী ফেরত পান। কিছুকাল পরে তিনি শাস্ত্রে আরো পাঠের উদেশ্যে কাশী পাড়ি দেন। শোনা যায় সেখানে তিনি তান্ত্রিক যোগ শিক্ষা লাভ করেন। দীর্ঘ ৮ বছর কাশী বাসের পর আবার ফিরে আসেন। ফিরে এসেই তিনি হংসেশ্বরী মন্দির তৈরির কাজে হাত দেন(১৭৯৯ সাল)। সে নাকি এক দক্ষযজ্ঞের মত ব্যপার ছিল। পাথর আনাচ্ছেন উত্তরপ্রদেশের চুনার থেকে ও মিস্ত্রী কারিগর আসছে রাজস্থান থেকে।

মন্দিরে রাজস্থানী শৈলীর আভাস

 কিন্তু সেই কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি দেহ রাখেন। এই অসম্পাত কাজের ভার নেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী শঙ্করী দেবী। । ১৮১৪ সালে রানী শঙ্করী মোট ৫ লাখ টাকার ব্যয়ে মন্দিরের কাজ শেষ করেন। শোনা যায় ‘প্রান প্রতিষ্ঠার’ সময় রানী বেশ জমকালো আয়োজন করেছিলেন।

পঞ্চ মুন্ডির আসন




রানী শঙ্করীঃ-


শঙ্করী দেবী তার সময়ের মহিলাদের থেকে বেশ আলাদা ছিলেন।তিনি তার স্বামীর মৃত্যুর পর গোটা এস্টেট নিজের হাতে সামলিয়েছেন। S.C Dey লিখছেন, “Unlike the females of the day, this lady had learnt to read and write, and, what was still more remarkable, to keep accounts. In point of fact, she was much above the average of her sex, it was, therefore, no wonder that she found no difficulty in personally managing the estate left in her charge.”। এমনটা বলা হয় যে, রানী শঙ্করী নাটোরের রানী ভবানী বা রানী রাসমণির তুলনায় কোন অংশে কম মহীয়সী ছিলেন না।

 
রানী শঙ্করীকে নিয়ে একটা মজার গল্প S.C Dey তার বইয়ে লিখেছেন। এক মোক্তার রানীর এস্টেটকে defaulter ঘোষণা করার উদ্দেশ্য নিয়ে একদিন রাজবাড়ীর নিলামের ব্যবস্থা করে। তো রানীমা এসবের কিছু জানতেন না। শুনে তো মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরার মত অবস্থা। রানী পালকি লাগাতে আদেশ দিলেন। দেখা গেল রানীমা একটা ঝাঁটা হাতে পালকি তে উঠছেন। তারপর কালেক্টর অফিসে যেয়ে সেই মোক্তার কে ঝাঁটা দিয়ে এই মারা কি সেই মারা। দৃশ্যটা একবার কল্পনা করুন। একটা এস্টেটের রানী কালেক্টর অফিসে এক মোক্তার কে ঝাঁটা পেটা করছেন।যে সময় কিনা বাইরের পুরুষ মানুষের সঙ্গে দেখা করা যেত না। পরে নাকি কালেক্টরের হস্তক্ষেপে ব্যপারটা মিটমাট হয়। এখনো হংসেশ্বরী মন্দির রানীর করে দেওয়া নিয়মেই চলে। এলাকার লোকেরা রানী শঙ্করী কে মা হংসেশ্বরীর চিন্ময়ী রূপ বলে মানে।   


হংসেশ্বরী মন্দিরঃ-



হংসেশ্বরী মন্দির

                                  What did he do? He built a temple. Still

                                 It stands, and 1 have seen it; but too ill

                                 Would words of mine describe it. lnside, out,

                                 Silent on earth, in a pinnacled air a shout,

                              lt doth reveal what to the initiate

                                 Figures pure thought. So unto them a gate

                                 ls opened to deliverance. 1 outside,

                                 Alien but not unmoved, untouched, abide

                                                           -------Bansberia Temple

                                               John Alexander Chapman

হংসেশ্বরী মন্দির দেখলে রাজা নৃসিংহদেবর তান্ত্রিক যোগ সম্বন্ধে যে অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল তার আচ পাওয়া যায়। বাংলা কেন সারা ভারতে এমন মন্দিরের দর্শন পাওয়া দুর্লভ। তিনি কুলকুণ্ডলিনী তত্ত্বকে মন্দিরের স্থাপত্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলে ছিলেন। কি অপরিসীম দক্ষতা, অধ্যাবসায় ও প্রতিভা থাকলে এটা সম্ভব হয় সেটা মন্দির দর্শন করলে টের পাওয়া যায়।

 



 এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল মন্দিরেই একটি ব্যাসাল্ট ফলকে লেখা আছে।

              শাকাব্দে রস বহ্ণি মৈত্র গণিতে শ্রীমন্দিরং মন্দিরং।
           মোক্ষদ্বার চতুর্দ্দশেশ্বর সমং হংসেশ্বরী রাজিতং।।
          ভূপালেন নৃসিংহদেব কৃতিনারব্ধং তদাজ্ঞানুগা।
         তৎপত্নী গুরুপাদপদ্মনিরতা শ্রীশঙ্করী নির্ম্মমে।।



ব্যাসাল্ট
 ফলক


অর্থাৎ,রস=৬ বহ্নি=৩ মৈত্র=১৭। " চতুর্দ্দশ মোক্ষদ্বার রূপী (চতুর্দশ) শিবের সহিত হংসেশ্বরী কর্ত্তৃক বিরাজিত গৃহ এই শ্রীমন্দির যাহা কৃতী নৃসিংহদেব ভূপাল কর্ত্তৃক আরব্ধ হয় তাহা ১৭৩৬ শকাব্দে তাঁহার আজ্ঞানুগা পত্নী গুরুপাদপদ্মনিরতা শ্রীশঙ্করী নির্ম্মান করিয়াছেন।"


এই মন্দিরটিতে ১৩ টি চূড়া আছে। পাঁচতলা মন্দিরের মোট উচ্চতা প্রায় ৭০ ফুট। মোট ১৪ টি কালো পাথরের শিব লিঙ্গ আছে, মধ্যস্থলের মিনারটির নীচের তলার প্রকোষ্ঠে একটি সাদা রঙের শিবলিঙ্গ রয়েছে।
সাদা শিব

ষটচক্রভেদের তত্ত্বকে অনুসরণ করে এই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরের গর্ভগৃহে অর্থাৎমূলাধারেসহস্রদল পদ্মের উপরে কুণ্ডলিনী শক্তিরূপ দেবী হংসেশ্বরী বিরাজমান। 

ষটচক্র

মা এখানে দারুমূর্তি, চতুর্ভুজা। প্রতিমা নীলবর্ণের। শিবের নাভিমূল থেকে প্রস্ফুটিত পদ্মের উপর ললিতাসনে মা বসে আছেন ।বাম চরণ খানি দক্ষিণ জঙ্ঘার উপর।বাম দিকের উপরের হাতে খড়গ নীচের হাতে নরমুণ্ড। ডানদিকের উপরে বরাভয় মুদ্রায় মা আশীর্বাদ করছেন আর নীচের হাতে শঙ্খ

মা হংসেশ্বরী

হংসেশ্বরী মন্দিরই আজকে আর পাঁচটা সাধারণ রাজ পরিবারের থেকে বংশবাটির এই রাজবাড়ীকে আলাদা করে তুলেছে। অনুপম এই মন্দিরে প্রতি বছর বহু ভক্তসমাগম হয়। বর্তমানে অনন্ত বাসুদেব মন্দির ও হংসেশ্বরী মন্দির সংরক্ষণের ভার   ASI এর উপর রয়েছে। যদিও এই পরিবারের যারা বর্তমানে এখানে আছেন তাদের আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট খারাপ।

মা মহিষাসুরমর্দিনী

নারায়ণ স্যানাল ও হংসেশ্বরীঃ

নারায়ণ সান্যালের লেখা হংসেশ্বরী বইটি বহুল পঠিত। আমার ব্যক্তিগত মতামত বইটি রচনাকালে নারায়ণ সান্যাল একটু কল্পনার দুনিয়াতে রাশ টানলেই পারতেন। তিনি মূলত ঐতিহাসিক তথ্য গুলোর জায়গাতে S.C dey বইটির প্রায় বঙ্গানুবাদ করেছেন। এবং কিছু জায়গায় নিজের কল্পনা মিশিয়েছেন। তাই কতগুলো জায়গাতে তথ্যের ত্রুটি চোখে পরে। দুটো উদাহরণ দিই-

১। গোবিন্দদেব সত্যসুন্দরীর পুত্র ছিলেন রাজা নৃসিংহ দেবরায়।তিনি নৃসিংহদেব' মা' নাম হংসেশ্বরী করে দেন।

২। রানী শঙ্করী ও শঙ্করদেব কে নিয়ে যে কাল্পনিক গপ্প ফেঁদে উনি যে গোটা বই জুড়ে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন প্রসঙ্গে সেটা এনেছেন তেমন টা বাস্তবে ঘটে নি। আর আমদের বেশীর ভাগের যখন স্কুলের গণ্ডির বাইরে ইতিহাস পড়া হয় না তখন এমন তথ্য বিকৃতি না ঘটানোই শ্রেয়। তাতে চরিত্রগুলির অবমুল্যায়ন ঘটে।





কৃতজ্ঞতা স্বীকার

১। রথীন্দ্র সরস্বতী

২।শুভদিপ মুখারজি

৩। অরিজিত সান্যাল


তথ্যসূত্রঃ-

 ১।The Bansberia Raj’ (1908)- Shumboo Chunder Dey

২। 'Monumentalizing Tantra:The Multiple Identities of the Hamsesvari Devï Temple and the Bansberia Zamindari'(2008)- Mohini Datta-Ray

৩।Hoogly Heritage

৪।Indian Vagabond

৫। Rangan Dutta

৬। ইন্টারনেট 


Note: Do share and comment. And to support click on the amazon affiliate link provided in the blog.


Plagiarism Checker Report:-
 



   
 





13 comments:

  1. ছোটখাট দুএকটা ভাষার ভুল ছাড়া, খুব ভালো লেখা হয়েছে। রাজা নৃসিংহদেবের পূর্বপুরুষদের বর্ণণা সামান্য দীর্ঘ। লেখাটিতে সৎ পরিশ্রম এর প্রকাশ সুস্পষ্ট

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভাসাটা খাপছাড়া লাগছিল?

      Delete
  2. সুন্দর হয়েছে । পরে সত্যি খুব ভালো লাগলো ।

    ReplyDelete
  3. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  4. লেখাটি পরে খুবই ভালো লাগলো। ছবিগুলি খুবই প্রাঞ্জল। তথ্য সঞ্চয়নে পারদর্শিতা চোখে পড়ার মতো। এরকম কম জানা বিষয়ে আরো নিবন্ধ পড়ার আশা থাকলো। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ অনুপম দা।

      Delete
  5. Informative content on specific place, hangseshwari temple.

    ReplyDelete

Powered by Blogger.